প্রকাশিত: ২৩/০৪/২০১৮ ৭:৩১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:৪৯ এএম

নিউজ ডেস্ক::
সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে বড় ধরনের অগ্রগতি এসেছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে। দশটি দেশ ও উন্নয়ন সংস্থা নতুন করে এ বিষয়ে সহায়তার অঙ্গীকার করেছে। শিগগিরই যৌথভাবে ঘোষণা দেবে তারা।

শনিবার ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বোর্ড অব গভর্নরসের দ্বিতীয় দিনের বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এর আগে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তায় বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বৈঠকে শুধু সুইডেন ছাড়া বাকিরা টাকার অঙ্ক বলেনি। অর্থ প্রদানের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো। পরিকল্পনায় কী পরিমাণ সহায়তা দেওয়া হবে এবং কীভাবে দেওয়া হবে তা উল্লেখ থাকবে। যেসব দেশ ও সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা করবে তারা হলো- যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, ইউনিসেফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএনএইচসিআর।

জানা যায়, বৈঠকে সুইডেন এক কোটি ৭০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা) দেবে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশকে তারা যে পরিমাণ সাহায্য দেয়, এটি হবে তার অতিরিক্ত। একইভাবে অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশকে যে সহায়তা দিয়ে আসছে, তার অতিরিক্ত হিসেবে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে সহায়তা দেবে তারা।

বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভূমিকা রেখেছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতনে উদ্বেগ প্রকাশ করে দাতা সংস্থা ও দেশগুলো বলেছে, বাংলাদেশ থেকে যাতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়, সে জন্য মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ আরও জোরদার করতে হবে। প্রত্যাবাসন চুক্তি দ্রুত কার্যকর দেখতে চায় তারা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইউএনএইচসিআরের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লকঅফ। এ সময় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম, ইআরডির বিশ্বব্যাংক উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগমসহ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সফরে আসা অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ বৈঠক রোববার শেষ হওয়ার কথা।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চুক্তি সই হলেও তা এখনও কার্যকর করেনি মিয়ানমার সরকার। ফলে কবে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ধরনের চাপে পড়বে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে নতুন করে যৌথ সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে।

অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকায় উচ্চ প্রশংসা করেছে দাতা দেশ ও সংস্থা। তারা বলেছে, এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে অর্থ দেবে। মিয়ানমার সরকারের কঠোর সমালোচনা করে মুহিত বলেন, রাজনৈতিকভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে ‘পাপেট’ আখ্যায়িত করে তিনি আরও বলেন, খুব সহসাই তারা ফিরে যাবে না। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা বলে মনে করেন মুহিত।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান সামরিক প্রধান বিদায় না হলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না। বৈঠক শুরুর আগের দিন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য যে টাকা দেওয়া হবে, তার পুরোটাই অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে বলে জানান বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর। সংস্থাটি ৩৫ কোটি ডলার থেকে ৪০ কোটি ডলার অনুদান দিতে পারে বলে জানা গেছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের মুখে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। মিয়ানমার সরকার যেন দ্রুত তাদের ফিরিয়ে নেয়, সে জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন চুক্তি হলেও এখনও তা কার্যকর করেনি মিয়ানমার সরকার।

বৈঠক শেষে বিশ্বব্যাংকে নিযুক্ত বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, দাতা দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীরা বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমার থেকে। কাজেই এর সমাধান তাদেরই করতে হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে বাড়তি অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এর আলোকে সহায়তা দেবে উন্নয়ন সহযোগীরা।

পাঠকের মতামত

কঠোর নির্দেশনার পরও মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা ছাড়ছে না ভোটের মাঠ

সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিতে কঠোর নির্দেশনা ...